সকালের নাস্তায় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি কিন্তু দিনের শুরুতেই
বেশি খাবার খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার
দেহের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো এবং নানা প্রক্রিয়া জেগে উঠতেও বেশ
সময় লাগে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের শুরুতে হালকা গরম পানি পান করা
বা হালকা জল খাবার খাওয়ার মাধ্যমে খাওয়া-দাওয়া শুরু করলে পাকস্থলীর বিপাকীয়
প্রক্রিয়া ভালো থাকে। আর ঘুম থেকে ওঠার অন্তত দুই ঘণ্টা পর নাস্তা করা
উচিত। তার আগে আপনি চাইলে এই ৮টি খাবারের যে কোনো একটি দিয়ে দিন শুরু করতে
পারেন। তাহলে আপনাকে আর শরীর বাবাজিকে কোনো চিন্তাই করতে হবে না।
১. মধু ও হালকা গরম পানি
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চা
চামচ মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেলে হজম শক্তি এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ে। এ ছাড়া দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলোও
বের করতে সহায়ক এই পানীয়।
২. চুপসানো কাজুবাদাম
দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকার পর সকালে ৫-১০টি কাজু বাদাম খেলে সারাদিন ধরে
পুষ্টি ও শক্তির যোগান দেবে। কাজুবাদামের খোসাতে থাকে ট্যানিন যা পুষ্টি
শোষণে বাধা দেয়। ফলে সেই খোসাটা পানিতে চুপসিয়ে নিলে তা থেকে সব পুষ্টি
উপাদান সহজেই শুষে নিতে পারে আমাদের দেহ।
৩. আমলকি জুস
সকালে খালি পেটে আমলকি জুস পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে এই জুস
পান করার পর ৪৫ মিনিট ধরে চা বা কফি পান করা যাবে না। আর নিয়মিত আমলকি
জুস পান করলে আয়ুও বাড়ে। এ ছাড়া পাকস্থলিকে বিষমুক্ত করতে এবং হজম
প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতেও সহায়ক আমলকি। এ ছাড়াও ত্বক পরিষ্কার,
স্বাস্থ্যবান চুল এবং চোখের জ্যোতি বাড়াতেও সহায়ক আমলকি জুস।
৪. পেঁপে
সকালে খালি পেটে পেঁপে খেলে পাকস্থলি পরিষ্কার হয় এবং বাওয়েল মুভমেন্ট মসৃণ
হয়। তবে পেঁপে খাওয়ার পর এক ঘণ্টা আর কিছু খাওয়া যাবে না। পেঁপে খেলে
রক্তে বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণও কমে আসে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
৫. চিয়া বীজ
এই বীজগুলো আসলে পরিপূর্ণ প্রোটিন। এতে জরুরি ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের
সবকটিই আছে। এ ছাড়া এসবে আছে জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন
এবং ভিটামিন বি। রাতে এক টেবিল চামচ চিয়া বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে
খালি পেটে খেয়ে নিন। নারকেলের দুধ বা কাজুবাদামের দুধের সঙ্গেও খেতে
পারেন।
৬. তরমুজ
এই ফলটি শুধুমাত্র খালি পেটেই খাওয়া উচিত। তরমুজ খাওয়ার সেরা সময় সকালে
ঘুম থেকে ওঠার পর। তরমুজে ক্যালোরি কম এবং ইলেকট্রোলাইটস বেশি। গ্রীষ্মের
সকালে এই ফলটি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৭. তেতো ঘি
এটি একটি আয়ুর্বেদিক রেসিপি। দেশি ঘির সঙ্গে নিম, মানজিষ্ঠা এবং আরো নানা
তেতো ভেষজ উপাদান মিশিয়ে এই ঘি তৈরি করা হয়। তেতো স্বাদের যে কোনো ভেষজ
দেহকে প্রশমিত ও পরিষ্কার করে এবং জীবাণু নাশক হিসেব কাজ করে। প্রতিদিন
সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানির সঙ্গে ১ চা চামচ তেতো ঘি খেতে পারেন। তবে
এটি খাওয়ার পর অন্তত আধা ঘণ্টা আর কিছু খাওয়া যাবে না। তেতো ঘি রক্তে
সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, প্রদাহ কমাতে এবং রক্ত পরিষ্কার ও
বিশুদ্ধ করতেও সহায়ক।
৮. খেজুর
খেজু্র তাৎক্ষণিক শক্তির উৎস হিসেবে সবার সেরা। যা দিন শুরু করার জন্য
জরুরি। খেজুরে আছে সহজে দ্রবণীয় খাদ্য আঁশ যা হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী
করে। কেননা তা পাকস্থলিতে প্রচুর পানি শুষে নেয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও
খেজুর বেশ কার্যকর। পাকস্থলির অস্বস্তিভাব দূর করতে এবং ডায়রিয়া নিরাময়েও
খেজুরে থাকা পটাশিয়াম সহায়তা করে।
ছোট্ট একটি অভ্যাসও আপনার স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
সকালের এই সহজ অভ্যাস আপনাকে সারাদিন ধরেই রাখবে সক্রিয় এবং সতেজ।
সূত্র: এনডিটিভি
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন