দেশের অধিকাংশ মানুষ ‘চিকিৎসক বিদ্বেষ’ নামক একধরনের মানসিক জটিলতায়
ভুগছে বলে মনে করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
(বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক ডা. গুলজার হোসাইন উজ্জ্বল। কর্মজীবনে নিজের অভিজ্ঞতা
এবং একজন চিকিৎসকের বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করায় এক ধরণের
বিতর্কের তৈরি হওয়ায় তিনি এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ওই
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন:
১. আমি মাঝে মাঝেই পেশার বাইরের কিছু কাজ করি।
যেমন স্ক্রিপ্ট লিখি। একবার কর্পোরেট ডকুমেন্টারির কাজে গেলাম এক নাম করা
ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিসি মহোদয়ের সাথে মিটিং হবে। ভিসি ভদ্রলোক
মহা ডায়ানামিক। শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, লেখক, কবি ইত্যাদি।
পরিচিত হয়ে ভাল লাগলো। কথা বলে জানতে পারলাম তিনি আরো দুটি প্রতিষ্ঠানে
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। পলিটিক্যাল কানেকশন ভাল। এলাকায় ভাল ফিল্ড
আছে।
আমি ডাক্তার শুনে শুরু করলেন গতানুগতিক আলোচনা। হাটু ব্যথার
জন্য রিউম্যাটলজির এক প্রফেসরের সিরিয়াল পেয়েছেন বহু কষ্টে। রাত দুইটায় সেই
ডাক্তার তাকে দেখলেন। এত রোগী কিভাবে দেখে? কী দেখে আসলে? তারপর অনেক
টেস্ট দিল।
আমার প্রোফাইল শুনে একটু ঠোট বাঁকা করে বললেন, আপনি
ডাক্তার মানুষ এসব করেন কেন? বললাম শখে করি। ভালো লাগে। ডাক্তারি ভালো লাগে
না? এত সময় পান কী করে? আমি তো প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করি না। তাই কিছু
সময় পাই।
ডাক্তার হয়ে ডাক্তারি করেন না? মানুষের সেবা করা কী ভালো না?
আমি
ডাক্তারি করি না তা তো বলিনি। আমি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার। সকাল বিকাল
রোগী দেখি। মাঝে মাঝে ইভিনিং নাইটও করি। শুধু প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করছি
না।
তারপরও… প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করলে আরো বেশি মানুষ সেবা পেত।
আমি তা মনে করি না। প্রতিটা কাজেই মানুষের সেবা হয়। আর সরকারি হাসপাতালে
কাজ করলে সেটা ইনকম্পলিট সেবা হয় এমন ধারণার কারণ কি? বরং সরকারি
হাসপাতালের ডাক্তাররা কেন প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করে তা নিয়েই তো বেশি
অভিযোগ করেন আপনারা।
ভদ্রলোক প্রসঙ্গ পাল্টালেন। এবার সরকারি হাসপাতাল ডাক্তাররা কী কী খারাপ কাজ করেন তাই নিয়ে শুরু করলেন বক্তৃতা।
২. একজন
ডাক্তার এবার বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে বলে অনেকেরই অস্বস্তি হচ্ছে।
শরীফুল হাসান নামের একদা প্রথম আলোর সাংবাদিক বর্তমানে পেশা পরিবর্তন করে
ব্র্যাক নামের এনজিওতে উচ্চ পদে কর্মরত, একটা লম্বা স্ট্যটাস লিখেছেন। আরও
অনেকেই লিখছেন।
তাদের মূল বক্তব্য-
রাষ্ট্রের অপচয়, মেধার অপচয়
ইত্যাদি। তারা ধরেই নিয়েছেন মেধাবীরা ডাক্তারি করবে, কম মেধাবীরা
পররাষ্ট্র, পুলিশ আর এডমিনে যাবে। কয়েক বছর আগে বিসিএস এ প্রথম হয়ে কাস্টমস
অফিসার হয়েছেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। তখন এসব আলাপ শুনিনি। পেশা পরিবর্তনের
অধিকার সবার আছে কেবল ডাক্তারের নেই।
৩. একজন লিখেছেন বিসিএসই যখন
দিবেন তাইলে ডাক্তারি পড়লেন কেন? বাংলায় পড়তেন। বোঝা যায় বাংলা বিষয়টাকে
তারা কিভাবে দেখেন। এডমিন ক্যাডার বা ফরেন ক্যাডারকেই বা কি বিবেচনা করেন?
কিন্তু প্রকাশ করেন উল্টাটা। হাহ ক্ষমতা!
আচ্ছা কেউ কি বলেছেন বাংলা
সাহিত্যের ছাত্ররা কেন ফরন ক্যাডারে যাবে? কেন তারা কবিতা, গল্প লিখবে না?
কেন তারা শুধু মাত্র বাংলা একাডেমিতে চাকরি নেবে না? শুধু কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অধ্যাপক হবে না? পাবলিক এডের ছেলেরাই শুধু এডমিন
ক্যাডারে যাবে এমন কথা বলা হয়কি?
৪. আগে আমি এসব বিশ্বাস করতাম না।
এখন করি। এদেশের অধিকাংশ মানুষ ‘চিকিৎসক বিদ্বেষ’ নামক একধরনের মানসিক
জটিলতায় ভুগছে। চিকিৎসকরা যাই করবেন তাতেই তাদের আপত্তি।’’
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন