পর্যটনে উন্নতি করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন পর্যটন সম্পর্কে দেশের সাধারণ
মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন। এ জন্য চাই সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগ এবং
সম্মিলিত প্রচেষ্টা। দক্ষিণ এশিয়ার স্থলবেষ্টিত ছোট্ট দেশ ভুটান আমাদেরকে
প্রতিনিয়ত যেন এই বিষয়টিই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে।পর্যটন ও
পর্যটকদের প্রতি দেশটির মানুষের ইতিবাচক মনস্তত্ব এবং ভৌগোলিক সৌন্দর্য
মিলে তৈরী করেছে এক বৈচিত্র্যময় উপভোগ্য পরিবেশ। যার উপস্থিতি প্রতিটি
পর্যটন প্রধান অর্থনীতির সফলতার পূর্বশর্ত।
বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশ হয়েও প্রাপ্ত সম্পদের যথার্থ
ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে আছে দেশটি। দেশটির জনসংখ্যা
মাত্র এক মিলিয়নেরও কম। ৩৮ হাজার ৩৯৪ বর্গ কিলোমিটারের দেশে মাত্র সাত লাখ
৯৭ হাজারের মতো মানুষ বাস করে। আয়তনে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ হলেও জনসংখ্যা
প্রায় ১৬০ গুনের অনেক কম। শুধু টিকে আছে বললে ভুল হবে, কারণ যে দেশের
মুদ্রার বিনিময় মূল্য ভারতের রুপির সমান, সে দেশ যে নিশ্চিত ভাবে এগিয়ে
যাচ্ছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। শুধু মুদ্রার মান দিয়ে অর্থনীতি সম্পর্কে
চূড়ান্ত ধারণা করা অমূলক, তারপরেও এটি একটি চ্যালেঞ্জ বটে। তাছাড়া দেশটির
যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইন্টারনেট, তথ্য-প্রযুক্তি, আধুনিক সুুযোগ-সুবিধার
অবকাঠামো দেখে কেউ আপাত দৃষ্টিতে একে ইউরোপের কোন দেশ বলেই মনে হয়।
কাগজে-কলমে কৃষি ও বনজ সম্পদ হলেও ভুটানের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা
শক্তি যে ‘পর্যটন’ তা ঘুরতে গিয়ে বেশ অনুভব করেছি। প্রথমেই জনগণ বা সাধারণ
মানুষ নিয়ে যে কথাটি বললাম তার পিছনে বড় একটি কারণ রয়েছে। সেটি হলো-
‘বাস্তবায়ন’। একটি দেশের সরকার, শাসকশ্রেণী বা রাজা, যিনিই যে কাজ করেন না
কেন, জনগণের মুখে তুলে খাইয়ে দিলেও তার বাস্তবায়ন হবে না যদি, জনগণ নিজ
থেকে সেগুলো পালন না করে।
পরিবেশের ক্ষতি করে এমন যেকোন কিছুই দেশটিতে ছলে-বলে-কৌশলে নিরুৎসাহিত
করা হয়েছে। কোথাও করা হয়েছে আইন দিয়ে, আবার কোথাও প্রথা নিয়ে। যেমন-
ধূমপান। আইন ও নিয়ম যে শুধু শাস্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বস্তু নয়,
বাস্তব জীবনে নিয়মের বন্ধনে আবদ্ধ হলে যে মানুষের পাশাপাশি প্রকৃতিও উপকৃত
হয়, দেশটির কাছ থেকে আমাদের এ শিক্ষাটি অবশ্যই নিতে হবে। ভুটানে আপনি
ধূমপান করতে পারবেন না। না মানে না। সেখানে ধূমপান করা ও তামাকজাত দ্রব্য
বিক্রি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অনুমতি নেই এমন জায়গায় ধূমপান করলে আপনাকে
জরিমানা গোনার পাশাপাশি জেলেও যেতে হবে।
অন্য দেশে হলে কি হতো জানি না, তবে ভুটানের প্রতিটি নাগরিক মনে প্রাণে এ
আইনের বাস্তবায়ন করে চলেছেন। কেউ প্রকাশ্যে ধূমপান করেন না। কোথাও
প্রকাশ্যে বিড়ি বা সিগারেট কিনতেও পাওয়া যায় না। ভুটান পুরো দেশটিই পাহাড়ের
উপরে। রোলার কোস্টারে যারা ইতোমধ্যে চড়েছেন বা রাইড নিয়েছেন তারা আমার
পরের বক্তব্যটি খুব ভাল করে বুঝতে পারবেন।
ভুটানে সমতলের রাস্তা একেবারে নেই বললেই চলে। প্রবেশ দ্বার থেকে শুরু
করে রাজধানী ও অন্যান্য শহরে যেতে প্রায় সব খানেই আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে
পাহাড়ের গা বেঁয়ে সরু রাস্তার উপর দিয়ে। এই পথে যেতে আপনার সেই রোলার
কোস্টারের অনুভূতি হবে নিশ্চিতভাবে। প্রথম দিকে একটু আধটু ভয় লাগতে পারে।
পরে অবশ্য উপভোগ করতে শুরু করবেন। অবশ্য রাতের বেলা হলে উপভোগের চেয়ে নিচে
পড়ার ভয় জেঁকে বসতে পারে। দিনের বেলা হলে নিশ্চিতভাবে উপভোগ্য হয়ে উঠে।
পারো থেকে থিম্পু যেতে মোট ছয় ঘন্টা লাগে। জিপ গাড়ি ঘনঘন ডানে-বামে
ঘুরতে থাকায় প্রথম দিন আমার কোমর হালকা ব্যথা হয়ে গিয়েছিলো। যে কথাটি বলতে
এতগুলো কথা বলা, তা হলো ‘বিপজ্জনক রাস্তা’। সমতল থেকে কয়েক হাজার ফুট উপরের
কোন রাস্তায় দ্বিতীয় ভুল করার কোন সুযোগ নেই। একবার পান থেকে চুন খসলে
নিশ্চিত মৃত্যু। কারণ রাস্তা থেকে একবার নিচে পড়লে আপনাকে কয়েক হাজার ফুট
নিচে গিয়ে পড়তে হবে। তাহলে এর সঙ্গে যে বিষয়টি প্রথমে আসে তা হলো- নিরাপদ
গাড়ি চালনা।
|
পারো জাদুঘরের পাশে পারো জং |
সড়ককে নিরাপদ রাখতে বাহ্যিক অবকাঠামো বৃদ্ধির পাশাপাশি মদ খেয়ে গাড়ি
চালানোর মতো বিষয়গুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ রকম রাস্তায় কেউ মদ খেয়ে গাড়ি
চালাবে না তা আমি হলফ করে বলতে পারি। শুধু আইন করে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব
হবে কেন? সঙ্গে দক্ষ চালকও তো থাকা চাই, তাই নয় কি? হ্যাঁ, ভুটানের রাস্তায়
গাড়ি চালাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে অনুমতি মিললেই একজন সেখানে গাড়ি চালানোর
অনুমতি পান। ব্যক্তিগত গাড়িসহ ভাড়াটে জিপ বা প্রাইভেটকারের সামনে চালকের
অনুমতির নম্বর বড় ফন্টে লিখে রাখতে হয়। এতে করে চালককে সনাক্ত করতে সুবিধা
হয়। পেশাদার চালকদের অনুমতিপত্রের সঙ্গে এককপি ছবিও রাখতে দেখেছি।
বিপজ্জনক রাস্তা হলেও পুরো ভুটানের কোথাও আপনি গাড়ির একটি হর্নও শুনতে
পাবেন না। এখানে কোন ড্রাইভার হর্ন ব্যবহার করেন না। নিয়ম মেনে চলার প্রতি
সবার যে আকর্ষণ, তা আমার সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে। রাস্তা ফাঁকা থাকা
সত্তেও কোন চালক নির্দিষ্ট গতির বেশি জোরে গাড়ি চালান না।
|
পাহাড়ের গা বেঁয়ে উঁচু নিচু রাস্তা |
কেউ আগে যেতে চাইলে গতি থামিয়ে অন্যকে আগে যেতে দেয়ার দৃশ্য এখানে চোখে পড়ে
নিয়মিত।বিশেষ করে শহরের কোন ফুটপাতের ধারে রাস্তা পার হবার জন্য কোন
পথচারীকে দেখা গেলেই গাড়ি থামিয়ে চালকরা তাদেরকে পার হবার সুযোগ করে দেন, এ
দৃশ্য দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। অনেক দেশেই এমন সংস্কৃতি বিরল। এরকম
নিয়ম-কানুন ও সৌজন্যতাবোধের এরকম আরও কিছু বিষয় সামনে আরও আসবে। চালককে
সতর্ক করতে নিয়মিত বিরতিতে ইংরেজি ভাষায় চমৎকার ও বুদ্ধিদীপ্তসব বাক্য দিয়ে
রাস্তার পাশে বসানো হয়েছে মাইলস্টোন।
|
ভুটানের রাস্তায় এরকম অসংখ্য মাইলস্টোন চোখে পড়ে |
এরকম কয়েকটা বাক্য আমি লিখে রেখেছি। যেমন- `খেয়ে হুইস্কি গাড়ি চালোনো
রিস্কি’, ‘আপনি যদি বিবাহিত হন, তাহলে গতিকে তালাক দিন’, ‘সবসময়
অপ্রত্যাশিতকে প্রত্যাশা করুন’, ‘ধীর ও স্থির সবসময় জয়ী হয়’, ‘আপনার ব্রেক
ঠিক আছে কি না এখনই দেখে নিন’, ‘গতি রোমাঞ্চকর, তবে প্রায়ই মৃত্যুর কারণ’,
‘হয় মদ খান, নইলে গাড়ি চালান’, ‘সেফটিকে অভ্যাসে পরিণত করুন’, ‘হয় সৌন্দর্য
উপভোগ করুন, নয় গাড়ি চালান’, ‘ তাড়াহুড়ো থেকেই দুশ্চিন্তার জন্ম হয়’, ‘এটা
অনেক গভীর, ঘুমিয়ে পড়বেন না’, ‘জীবন একটি ভ্রমণ, এটি সম্পূর্ণ করুন’, ‘এটি
রাস্তা, দৌড় প্রতিযোগিতার রাস্তা না’ ইত্যাদি।
|
ভুটানের রাস্তায় এরকম অসংখ্য মাইলস্টোন চোখে পড়ে |
একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেই। দেশটির প্রায় সবারই নিজস্ব গাড়ি রয়েছে।
এজন্য সেভাবে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই। নেই কোন রেললাইনও। তবে প্রচুর ভাড়ায়
চালিত জিপ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পাবলিক বাস ভাড়া দেয়া হয়। এ ছাড়া
নির্দিষ্ট সময়ে কিছু পাবলিক বাস অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করে থাকে। এদেশে কোন
যানজট নেই। থাকবে কিভাবে? সবাই আইন মানেন, জনসংখ্যা কম, যেসব কারণে যানজট
বাধে, তার সব কিছুই এখানে অনুপস্থিত। দেশটির ট্রাফিক পুলিশদের মূল দায়িত্ব
হচ্ছে দর্শনার্থী বা পর্যটকদের নির্দিষ্ট জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার
হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। কোন গাড়ি নির্দিষ্ট গতি সীমার বেশি গতিতে চললে
তাকে জরিমানা করা।
এবার আসি খাওয়া-দাওয়া বিষয়ে। শহর এলাকাতে হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি
রয়েছে প্রচুর বার, যেখানে সবাই প্রাণ খুলে আড্ডা দিতে পারেন। এছাড়া শহরের
বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ধরনের টাটকা ফলমূল, জুস,
ফাস্টফুড এবং ভুটানিজ খাবারের দোকান তো রয়েছেই। সন্ধ্যার পর জমে ওঠে
স্থানীয় নাইট ক্লাবগুলো। বাংলাদেশের বার ও রেস্তোরাঁ থেকে এখানকার বার ও
রেস্তোরাঁর মূল পার্থক্য হচ্ছে পরিবেশ ও পরিবেশনা। এদেশে অ্যালকোহল খাওয়ায়
কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বয়স ভেদে সবাই অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় পান করতে পারেন
সর্বত্রই। অবশ্যই গাড়ি চালানোর সময় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাড়তি চাহিদার কথা
মাথায় রেখে এখানেই উৎপাদিত হয় বিভিন্ন ধরনের পানীয়। যার কারণে দেশটিতে
পানীয় পণ্যের মূল্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। মাত্র দেড়
ডলারেই এক লিটার স্থানীয় জিন ভদকা বা বিয়ার কিনতে পারবেন।
|
ভুটানি বার ও রেস্তোরাঁ |
জনসংখ্যা কম হওয়ার সুযোগটিকে খুব ভালো ভাবেই কাজে লাগিয়েছে দেশটি। প্রায়
সব জায়গাতেই পরিবারকে একসঙ্গে রাখার একটা চেষ্টা বেশ চোখে পড়ে। ধরুন আপনি
কোন জাদুঘরে ঘুরতে গেলেন। গিয়ে দেখলেন ভেতরে যিনি পরিচালক রয়েছেন, তার
সঙ্গে তার স্ত্রী ও বাচ্চা-কাচ্চাও রয়েছে। আরো ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে
পারবেন সেখানে তাদের বসবাসের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। চলছে রান্না-বান্নাসহ
সংসারের অন্যান্য কাজ। শুধু জাদুঘর নয়, পুলিশ স্টেশন থেকে শুরু করে
রেস্তেরাঁ, মুদি দোকান, ভিসা অফিস বা খাবারের দোকান যেখানেই যান না কেন,
এমন দৃশ্য চোখে পড়বে। পুনাখাতে গিয়ে একটা বিষয়ে অভিযোগ করতে আমরা থানায়
গিয়েছিলাম। যাত্রাপথে আমি ভুল করে ট্রাফিক পুলিশ স্টেশনে ঢুকে যাই। সেখানে
গিয়ে দেখি দায়িত্বরত কর্মকর্তা পোশাক পড়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করছেন। পাশেই
তার স্ত্রী বসে রয়েছেন। রুমের মধ্যে বাচ্চারা খেলাধূলা করছে। কি চমৎকার
কাজের পরিবেশ!
এটা নিয়ম কি না জানি না। যদি এটাই নিয়ম হয়, তাহলে এই ব্যবস্থার বিশেষ
একটি সুবিধা রয়েছে। তা হলো ‘টেনশন ফ্রি সিস্টেম’। বাড়িতে বউ রেখে থানায় এসে
দায়িত্বপালন করাটা পুলিশ অফিসারের জন্য একটু কঠিন। কিংবা ব্যাংকে যদি
স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করেন তাহলে কাজের ভেতর টেনশনজনিত
সময়গুলো নষ্ট হয় না। কারখানা বা জমি হলে এর উৎপাদন বাড়ে। দেশটির প্রায়
প্রতিটি বাড়িই এক একটি হোটেল বা রেস্তোরাঁ, আবার প্রতিটি বাড়িই এক একটি
মুদির দোকান। অর্থাৎ যিনি মালিক তিনি নিজের বাসাকেই হোটেল বানিয়েছেন। যিনি
মুদি দোকানদার তিনি নিজের বাসার সঙ্গেই গড়েছেন সে দোকান। প্রায় সব ধরনের
মালিকানার জায়গাতেই নারীদেরকে দেখতে পেয়েছি। পুরুষ যা দেখিছি তাদের
অধিকাংশই কিচেনের ভিতরে কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
|
পাহাড়ের গা বেঁয়ে উঁচু নিচু রাস্তা |
পর্যটন শিল্পে সফলতার জন্য সবার আগে আচরণ, চিন্তা-ভাবনা, কাজ-কর্মে
পরিবর্তন আনতে হবে জনগণকে। যেটি ভুটান সরকার করেছে অত্যন্ত সফলভাবে। সেদেশে
পর্যটকদের খুবই ইতিবাচকভাবে দেখা হয়। সংক্ষেপে বলতে গেলে দেশটি আগাগোড়া
পর্যটক বান্ধব এক দেশ। এমন অবস্থা হয়তো রাতারাতি হয়ে যায়নি। দীর্ঘদিন ও
দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে বিষয়টির ইতিবাচক দিক এবং এর
সুফলগুলো গেঁথে গেছে।
|
পাহাড় ও ড্রাগনের দেশ ভুটান অপার সৌন্দর্যের নীলাভূমি |
পরিবেশ ও নিজস্ব সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে সাজানো হয়েছে দেশটির যাবতীয়
সবকিছু। রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘর, পরিবহণ ও যাতায়াত ব্যবস্থা,
হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তেরাঁ, মন্দির এবং দর্শনীয় স্থান। সবখানেই প্রকৃতির
প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সবার আগে, তারপর নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং
অন্যান্য। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যাতে নিজস্ব পরিবেশ ও সংস্কৃতির জন্য
উপযোগী হয়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সেজন্য বিস্তর কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা
হয়েছে।
যে রেস্তোরাঁর ভিতরে ঢুকি বা যে বাসার সামনে যাই দেখি দেশটির রাজা জিগমে
খেসার ওয়াংচুক, তার স্ত্রী ও পুত্র সন্তানের ছবি। সব খানেই তাদের ছবি
রয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম এটাই হয়তো আইন। কৌতুহল নিয়ে কয়েকজনকে একান্তে
জিজ্ঞাসা করেছিলাম বিষয়টা নিয়ে। পরে জানলাম এরকম কোনে আইন বা বাধ্যবাধকতা
নেই। ভুটানের মানুষ তাদের রাজাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। নিছক ভালোবাসা থেকেই এই
কাণ্ড। ভুটানের একটি বাড়ি বা রেস্তোরাঁ পাবেন না যেখানে রাজা-রানীর ছবি
নেই।
|
রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক, রানী ও রাজপুত্র |
এমনটি হবে কেন? যে রাজা তাদের জন্য এতকিছু করেছেন, তাকেই তো প্রাণ দিয়ে
ভালোবাসা যায়। যারা জানেন না তাদেরকে একটু জানিয়ে রাখি। যদিও বিষয়টি আমি
জেনেছি কয়েকদিন আগেই। রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক চাইলে চিরকাল সরাসরি রাজ
ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। ২০০৮ সালের ১৮ই জুলাই দেশটির
সংসদ একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে। যেখানে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন
হলে রাজাকে অভিশংসন করার ক্ষমতা দেয়া হয় সংসদকে। সেদিন থেকেই দেশটিতে
আনুষ্ঠানিক রাজার শাসনের অবসান ঘটে। দেশটি যুক্তরাজ্যের মতো একটি
সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়।
এতক্ষণ ধরে নানা রকম তথ্য দিয়ে আমি যে বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছি তা হচ্ছে
পর্যটনের সফলতা একটি সামগ্রিক বিষয়। শুধু সরকার বা রাষ্ট্র চাইলে এটি সম্ভব
নয়, আবার শুধু জনগণ চাইলেও সম্ভব নয়। সবাইকে একসঙ্গে চাইতে হবে। এ জন্য
কাজ করতে হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটক সম্পর্কে আমাদের মনোস্তাত্বিক পরিবর্তন
দরকার। পথে-ঘাটে বিদেশি পর্যটক দেখলে আমরা যে ‘দৃষ্টি’ দেই, যে ‘আচরণ’ করি,
তাতে ভুল করেও একজন পর্যটক দ্বিতীয়বারের জন্য এদেশ ভ্রমণ করবেন না, এটি
সহজেই অনুমান করা যায়। পর্যটন সংক্রান্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও নীতি নির্ধারকগণ
এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারেন।
সূত্রঃ
চ্যানেল আই অনলাইন
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন