বলিউডের মহাকাশে আরও এক নতুন তারা জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় আছে। সেই তারার নাম জাহ্নবী কাপুর।
কিন্তু নিজের মতো করে জ্বলে ওঠার আগে এই সদ্য কৈশোর পেরোনো জাহ্নবীকে অনেক
ঝড় পার হতে হচ্ছে। সেসব কথাই প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন
জাহ্নবী। একবুক যন্ত্রণা আড়াল করে সদ্য প্রয়াত মা শ্রীদেবীর কথাও আমাদের
শোনালেন। ২০ জুলাই তাঁর প্রথম ছবি ধড়ক মুক্তি পাবে। এ উপলক্ষেই প্রথম আলোর
মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্যের কাছে খুলে দিলেন তিনি তাঁর মনের সব
জানালা।
প্রশ্ন: মা শ্রীদেবীকে দেখেই কি অভিনেত্রী হওয়ার বাসনা জন্মেছিল?
ছোট থেকেই আমার অভিনেত্রী হওয়ার পোকা মাথায় ছিল। আসলে আমার
কলেজে যাওয়া পছন্দ ছিল না। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতির ওপর খুব একটা আস্থা ছিল
না। মাঝে আবার মনে হয়েছিল অভিনয় ছাড়া অন্য কোনো জগৎ আবিষ্কার করার কথা। তাই
ভেবেছিলাম অভিনয়ের কোর্স হয়ে গেলে ফ্যাশন কিংবা শিল্প-ইতিহাস বিষয়ে কোর্স
করব। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে আমি একটা অভিনয়ের কোর্স করতে যাই।
একদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে একটা দৃশ্যে অভিনয় করছিলাম। আর তখনই উপলব্ধি করি যে
একবার ক্যামেরার সামনে বা দর্শকের সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করলে আর অন্য কোনো
কাজ করা যায় না। মাকে তখনই ফোন করে জানাই যে, এই কোর্স শেষ করে মুম্বাই
ফেরার পর অভিনয় করব।
প্রশ্ন: শুনেছি, আপনার মা কখনোই চাননি আপনি অভিনেত্রী হন। তিনি চেয়েছিলেন আপনি বিয়ে থা করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
আসলে মা জানতেন যে এই জগতে টিকে থাকতে হলে কতটা কঠোর পরিশ্রম
করতে হয়। জীবনে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। অভিনয় মানে ক্যামেরার সামনে
দাঁড়িয়ে শুধু সংলাপ বলা নয়। মা হয়তো চাননি আমি এই পথ পরিক্রম করি। কিন্তু
মা জানতেন যে আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থাকব। তাই অভিনয়ে আসা নিয়ে মায়ের অমত
ছিল বললে ভুল বলা হবে।
প্রশ্ন: শ্রীদেবীর কন্যা হিসেবে কতটা চাপে ছিলেন? কারণ সব সময় মায়ের সঙ্গে তুলনা তো চলেই আসে।
চাপ এখন বেশি অনুভব করছি। কারণ, সবাই এখন আমাকে একই প্রশ্ন
করছেন। কিন্তু ক্যামেরার সামনে অভিনয় করার সময় কোনো চাপ অনুভব করিনি। তখন
শুধু নিজের চরিত্র, ছবির গল্প নিয়েই বেশি ভেবেছি। এখন এসব তুলনা আমার
দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, আমি দেখেছি আমাদের পরিবার ও আমার মাকে
সবাই কতটা ভালোবাসে। সবাই কতটা সম্মান করে। তাই আমিও চাই আমার কাজের মধ্য
দিয়ে তেমনই ভালোবাসা আর সম্মান পেতে।
প্রশ্ন: ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই সবাই আপনাকে নিয়ে আলোচনা করছে। ছবি মুক্তির আগেই তো তারকা হয়ে গেলেন। কেমন লাগছে?
আমি সবার মনে ভালো অভিনেত্রী হিসেবে বাঁচতে চাই। তারকা হিসেবে না।
প্রশ্ন: মারাঠি সুপারহিট ছবি ‘সায়রাত’ অবলম্বনে ‘ধড়ক’ ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
ধড়ক করতে গিয়ে আমি প্রতি পদে পদে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি।
এই চ্যালেঞ্জ আমি খুব উপভোগও করেছি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারছি। নতুন
নতুন দিক আবিষ্কার করতে পারছি।
প্রশ্ন: মা এবং বাবার কোন কোন গুণ আপনার মধ্যে আছে বলে মনে হয়?
মায়ের মতো আমি খুব মিষ্টি খেতে ভালোবাসি। মায়ের মতো আমি খুব
স্পর্শকাতর। অনেকে বলেন, আমাকে কিছুটা মায়ের মতো দেখতে। কিন্তু সেটা তো
জেনেটিক। বাবার (বাবা বলিউডের প্রযোজক বনি কাপুর) মতো সিনেমার ব্যাপারে আমি
আগাম অনেক কিছু বলতে পারি। আর বাবার মতো আমার পা দুটো রোগা!
প্রশ্ন: আর পাঁচজন সাধারণ শিশুর থেকে তো আপনার শৈশব নিশ্চয়ই আলাদা ছিল?
আমি খুব একটা স্কুলে যেতাম না। স্কুলে আমার উপস্থিতির হার
বছরে ২০ শতাংশের মতো থাকত। আমি সব সময় বাবা-মায়ের সঙ্গে নানান জায়গায় ঘুরে
বেড়াতাম। তাঁদের সঙ্গে শুটিংয়ে যেতাম। ফিল্মের মধ্য দিয়েই আমি দুনিয়াকে
দেখতাম। বাবা দু-তিনটা ছবি একসঙ্গে বানাচ্ছিলেন। আমি তখন সেই সব ছবির সেটেই
থাকতাম। দারুণ মজা লাগত। একজন প্রযোজকের কাছে অভিনেতার ব্যবহার কতটা
গুরুত্বপূর্ণ, কীভাবে সেটে একজন অভিনেতার থাকা উচিত তা আমি সেই ছেলেবেলাতেই
শিখেছি।
প্রশ্ন: বাবা বনি কাপুর ও মা শ্রীদেবী কে বেশি আদর করতেন, আর কে বেশি শাসন করতেন?
বাবা-মা দুজনই আমাকে খুব আদর করতেন। তবে শাসনটা মা-ই বেশি করতেন। আমার মনে হতো, তাঁরা দুজনই আমার চাইতেও খুশিকে (জাহ্নবীর ছোট বোন) বেশি আদর করতেন।
প্রশ্ন: বাবা বনি কাপুর ও মা শ্রীদেবী কে বেশি আদর করতেন, আর কে বেশি শাসন করতেন?
বাবা-মা দুজনই আমাকে খুব আদর করতেন। তবে শাসনটা মা-ই বেশি করতেন। আমার মনে হতো, তাঁরা দুজনই আমার চাইতেও খুশিকে (জাহ্নবীর ছোট বোন) বেশি আদর করতেন।
প্রশ্ন: ‘ধড়ক’ ছবির ট্রেলার লঞ্চের সময় খুশিকে কাঁদতে দেখা যায়। মনে হচ্ছিল, ও আপনার বিষয়ে খুবই আবেগপ্রবণ?
খুশি ভীষণই আবেগপ্রবণ, কিন্তু ও কখনো তা প্রকাশ করে না। তবে সেদিন ওর কান্না দেখে আমি অবাক হই। এমনকি ও নিজেও অবাক হয়েছিল।
প্রশ্ন: মায়ের সামনে জীবনের প্রথম শট দেন। কতটা নার্ভাস ছিলেন?
আমি খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম। আর শশাঙ্ক (ধড়ক ছবির নির্মাতা
শশাঙ্ক খৈতান) আমাদের জন্য একটা পারিবারিক আবহ তৈরি করেছিল। তাই খুবই
স্বচ্ছন্দে ছিলাম। তবে মা সামনে থাকায় একটু তো নার্ভাস ছিলামই। মা সেটা
উপলব্ধি করে পরে সেটের বাইরে গিয়ে বসেছিলেন। ছবির প্রথম দৃশ্য এক টেকেই হয়ে
গিয়েছিল।
প্রশ্ন: শ্রীদেবী আপনার ছবির কিছু অংশ দেখেছিলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
হ্যাঁ, মা ২০ মিনিটের মতো ‘র্যাশেস’ (খসড়া অংশ) দেখেছিলেন।
দেখে অনেক কিছু বলেছিলেন। আর মা খুবই খুশি ছিলেন। তিনি আমাকে ছোট একটা
উপদেশ দেন। মা বলেছিলেন যে ছবির দ্বিতীয় ভাগে আমি যেন কোনো মেকআপ না করি।
আর আমি মায়ের কথামতোই একদম মেকআপ করিনি।
প্রশ্ন: অর্জুন কাপুর (বনি কাপুর ও প্রথম স্ত্রী মোনা কাপুরের ছেলে) ভাই হিসেবে কেমন?
আমি খুবই ভাগ্যবতী যে অর্জুনের মতো ভাই পেয়েছি। এই শেষ কয়েক
মাসে আমাদের পরিবারের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। আর অর্জুন পাহাড়ের মতো আমাদের
পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের সম্পর্কটা এখন অনেক মজবুত হয়েছে। ও আমাকে ভীষণ
প্রেরণা জোগায়। ও আমাদের রোলমডেল।
প্রশ্ন: বলিউডের কোন কোন অভিনেত্রী আপনাকে অনুপ্রেরণা জোগান?
অনুপ্রেরণার কথা বললে মধুবালা, ওয়াহিদা রেহমান, নূতন, মীনা কুমারীর কথা বলব। তাঁদের মতো হতে ইচ্ছে করে।
প্রশ্ন: মায়ের হয়ে আপনি জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। কী রকম ছিল সেই মুহূর্ত?
খুবই আবেগঘন মুহূর্ত ছিল। বিশেষ করে বাবার জন্য। মায়ের কাছে
মম ছবিটা খুব স্পেশাল ছিল। মা মনে করতেন একজন অভিনেত্রী হিসেবে এই ছবি
তাঁকে পরিপূর্ণ করেছে। আজ যদি মা থাকতেন নিশ্চয় খুব খুশি হতেন। কারণ, একজন
শিল্পী সব সময় চান তাঁর কাজ যথাযথ স্বীকৃতি পাক।
প্রশ্ন: ‘ধড়ক’ ছবিতে ঈশানের সঙ্গে আপনার রসায়নের ব্যাপারে কি বলবেন?
এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য শশাঙ্কের (ছবির পরিচালক)। শশাঙ্কই আমাদের মধ্যে রসায়ন তৈরি করেছেন।
প্রশ্ন: ছবির শুটিংয়ের জন্য কলকাতায় গিয়েছিলেন। কলকাতার মিষ্টি নিশ্চয় খেয়েছেন? আপনার মায়ের মতো আপনিও মিষ্টির ভক্ত।
মিষ্টিদই আর সন্দেশ অনেক খেয়েছি। আমার দারুণ লেগেছে কলকাতা। বিভিন্ন
জায়গায় ঘুরে ঘুরে শুটিং করেছি—ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজে। কলকাতা
থেকে ফিরে আমি সত্যজিৎ রায়ের চারুলতা ছবিটা দেখেছিলাম। সত্যি অপূর্ব একটা
ছবি।
সূত্রঃ প্রথম আলো
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন