বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম বিল গেটস। এ তথ্য মোটামুটি সবারই জানা। কিন্তু বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম কি জানা আছে?
সম্প্রতি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘মানি’
প্রকাশ করেছে ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী দশজন ব্যক্তির তালিকা। এ তালিকা তৈরি
খুব সহজ কাজ ছিল না। কারণ সময়ের সঙ্গে মুদ্রার মান পরিবর্তন হয়। আবার
বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে বিভিন্ন সময়। তাই এ তালিকা
তৈরিতে সমসাময়িক বিশ্ব অর্থনীতিতে সেই ব্যক্তির প্রভাবও বিবেচনা করা
হয়েছে।
চেঙ্গিস খান
মঙ্গোলিয়ান সম্রাট চেঙ্গিস খান নিজের জন্য কোন রাজপ্রাসাদ বা ধর্মীয়
উপাসনালয় নির্মাণ করেননি। এমনকি নিজের কোনো বাড়িও ছিল না। তার জন্ম-মৃত্যু
দুটোই তাঁবুতে। তারপরেও সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় চেঙ্গিস
খানের নাম দশ নম্বরে।
চেঙ্গিস খান ছিলেন বিপুল পরিমাণ জমির মালিক। তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড়
সাম্রাজ্য শাসন করতেন তিনি। ফলে এসব এলাকার ভূসম্পদেরও তিনি মালিক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন চেঙ্গিস খানের সম্পত্তির আরেকটি বড় উৎস হলো
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে লুট করা ধন-সম্পদ। ‘চেঙ্গিস খান অ্যান্ড দ্য মেকিং অব
মর্ডান ওয়ার্ল্ড’ বইতে লেখক জ্যাক ওয়দারফোর্ড উল্লেখ করেন, প্রাচীন আমল
থেকে যুদ্ধলব্ধ ধন-সম্পদ সৈন্যরা লুট করতো। কিন্তু চেঙ্গিস খানের বাহিনীর
নিয়ম ছিল ব্যতিক্রম। লুট করা সম্পত্তি সরকারিভাবে বণ্টন হতো। সেখান থেকে
চেঙ্গিস খান ভালো সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেছিলেন।
বিল গেটস
জীবিতদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস। তবে বিশ্বের ইতিহাসে তার অবস্থান নবম। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে বর্তমানে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮৯ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (অক্টোবর, ২০১৭)।
প্রথম উইলিয়ামের ভাগ্নে অ্যালান রুফসকে সেসময় অ্যালান দ্য রেড নামেও ডাকা হতো। তিনি প্রথম উইলিয়ামের রাজ্য বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১০৯৩ সালে রুফস মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার পাউন্ড। এ সম্পত্তির বর্তমান অর্থমূল্য প্রায় ১শ ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জন রকফেলার
১৮৬৩ সালে জন রকফেলার যুক্তরাষ্ট্রের পেট্রোলিয়াম শিল্পে বিনিয়োগ শুরু
করেন। ১৮৮০ সালের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল সেদেশ
নব্বই শতাংশ পেট্রোলিয়াম উৎপাদন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। নিউইয়র্ক টাইমসের
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯১৮ সালে তার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল দেড় বিলিয়ন
মার্কিন ডলার। ২০১৪ সালে এ পরিমাণ সম্পত্তির অর্থমূল্য প্রায় ৩৪১ বিলিয়ন
ডলার।
এন্ড্রু কার্নেজি
এন্ড্রু কার্নেজিকে বলা হয় সর্বকালের সবচেয়ে ধনী আমেরিকান। ১৯০১ সালে তিনি
নিজের কোম্পানি ‘ইউএস স্টিল’ সেদেশের আরেক ধনকুবের ব্যাংকার জেপি মর্গানের
কাছে ৪৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন, যা ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের
জিডিপির দুই দশমিক এক শতাংশ। বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক মানদণ্ডে এন্ড্রু
কার্নেজির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩৭২ বিলিয়ন ডলার।
জোসেফ স্টালিন
সর্বকালের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় জোসেফ স্টালিনের উপস্থিতি কিছুটা
আশ্চর্যজনক। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ অর্থ ব্যবস্থার একচেটিয়া অধিপতি ছিলেন
তিনি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অনন্য অর্থব্যবস্থার কারণে সেদেশের সম্পত্তি
আর স্টালিনের সম্পত্তিকে আলাদা করা যায় না।
১৯৫০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে নয় দশমিক পাঁচ শতাংশ জিডিপি যুক্ত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
আকবর
মোঘল সম্রাট আকবর তার শাসনকালে বিশ্বের ২৫ শতাংশ জিডিপি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
তাছাড়া তার শাসনামলে মোঘল সাম্রাজ্যের অর্থনীতি অনেক বেশি ফুলে-ফেঁপে
উঠেছিল। ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক প্রভাবের ভিত্তিতে ইতিহাসের ধনী ব্যক্তিদের
তালিকায় আকবরের অবস্থান চারে।
সম্রাট সেনজং
চীনের সং রাজবংশ ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর রাজবংশ। চীনের অর্থনীতি ও ইতিহাস বিষয়ক গবেষক রোনাল্ড এডওয়ার্ড বলেন, তৎকালীন সময়ে এ রাজবংশ বিশ্বের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক ছিল। আর সম্রাট সেনজংয়ের আমলে এ রাজবংশ তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রাচুর্য্য অর্জন করে।
অগাস্টাস সিজার
রোমান সম্রাট অগাস্টাস সিজার ছিলেন ইউরোপিয়ান রাজাদের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে প্রভাবশালী। সমগ্র মিশর ছিল তার ব্যক্তি মালিকানায়। ইতিহাসবিদদের মতে রোম সাম্রাজ্যের মোট সম্পত্তির পাঁচ ভাগের এক ভাগই ছিল সিজারের ব্যক্তিগত।
মানসা মুসা
টিম্বাকটুর রাজা মানসা মুসাকে বলা হয় বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে ধনী
ব্যক্তি। পশ্চিম আফ্রিকার এই টিম্বাকটু ছিল তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি
সোনা উৎপাদনকারী রাজ্য। আর সেসময় বিশ্বঅর্থনীতিতে সোনার চাহিদাও ছিল
ব্যাপক।
এখন প্রশ্ন হলো, ঠিক কতোটা ধনী ছিলেন মুসা? গবেষকরা জানান মুসার
সম্পত্তির পরিমাণ অংকে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের
ইতিহাসের প্রফেসর রুডলফ ওয়ার বলেন, একজন ব্যক্তির পক্ষে সর্বোচ্চ যে
পরিমাণ সোনার মালিক হওয়া সম্ভব তা একবার কল্পনা করুন। এরপর সেটাকে দ্বিগুণ
করুন। তাহলে মুসার সম্পত্তির পরিমাণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া সম্ভব।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন